procounsel

Oct 01

2025
  • by Black & White Law House

রপ্তানি করলেই কি ভ্যাট নেই শুল্ক কর সুবিধা বিদ্যমান? জানুন সঠিক আইন।

1.     রপ্তানি করলেই কি ভ্যাট নেই? শুল্ক-কর সুবিধা বিদ্যমান? জানুন সঠিক আইন

সাধারণ অর্থে, রপ্তানি বলতে মূলত নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে পণ্য পাঠানোকে বোঝায় পণ্য বা সেবার বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার বাইরে সরবরাহ দেয়া এবং তার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় মূল্য পাওয়াকে সাধারণত রপ্তানি বলে। মূল্য সংযোজন কর সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ধারা (৮২) মোতাবেক রপ্তানি অর্থ বাংলাদেশের অভ্যন্তর হইতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার বাহিরে কোন সরবরাহ এবং প্রচ্ছন্ন রপ্তানিও উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে। ধারা (৬২) মোতাবেক প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের বাহিরে ভোগের জন্য অভিপ্রেত কোন পণ্য বা সেবা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে সরবরাহ। প্রচ্ছন্ন রপ্তানিতে দুইটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সরবরাহটি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে হতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরবরাহটি নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রদান করতে হবে। এই পদ্ধতি বিধি বা আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে। এখানে বিধিবদ্ধ পদ্ধতি বলতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা অভ্যন্তরীণ ঋণপত্র বা চুক্তিপত্র ইত্যাদির বিপরীতে সরবরাহটি প্রদান করতে হবে। এছাড়াও স্থানীয় ঋণপত্রের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন পণ্য বা সেবা সরবরাহও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হিসেবে গণ্য হবে।ধারাটি দুইটি বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো সরবরাহ সরাসরি রপ্তানি হতে হলে মূলত দুটি বৈশিষ্ট্য আবশ্যিকভাবে থাকতে হবে।

১। সরবরাহটি দেশের বাইরে হতে হবে,         

২। সরবরাহটি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে হতে হবে।

প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং রপ্তানি এর দুটি বিষয় রপ্তানি হিসেবে বিবেচিত হবে বিধায় এই ধরনের সরবরাহের উপর ভ্যাটের হার হবে শূন্য শতাংশ। সহজ ভাষায় প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হচ্ছে কোন একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা অভ্যন্তরীণ ঋণপত্রের বিপরীতে কোন পণ্যের সরবরাহ করা এবং বৈদেশিক মুদ্রায় মূল্য পাওয়া। রপ্তানি নীতি ২০২৪-২০২৭ এর সপ্তম অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ .১৪. রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যূনতম ৮০% রপ্তানি করা হলে তাকে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হবে। অনুচ্ছেদ .১৪. অনুযায়ী অবশিষ্ট ২০% উৎপাদিত পণ্য শুল্ক কর পরিষদের পর স্থানীয় বাজারে বাজারজাতকরণ করতে পারবে। অন্য আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে রপ্তানিকে শতভাগ রপ্তানি মুখী প্রতিষ্ঠান এবং আংশিক রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।  শতভাগ রপ্তানি মুখী প্রতিষ্ঠান বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স সুবিধা পেয়ে থাকে। বন্ড লাইসেন্স সুবিধার আওতায় শতভাগ রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান শুল্ক কর পরিশোধ ছাড়া উপকরণ আমদানি বা ক্রয় করতে পারে। আংশিক রপ্তানি মুখী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে তার মোট উৎপাদনের ৮০% এর কম অংশ রপ্তানি করে থাকে।  আংশিক রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাস্টমস বন্ড লাইসেন্স পায়না। তাদেরকে শুল্ক করাদি পরিশোধ করে কাঁচামাল আমদানি করতে হয় বা স্থানীয় উৎস থেকে ক্রয় করতে হয়। এছাড়াও ইপিজেড অবস্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহও রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এবং পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহও রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। মূসক সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি (চচ) অনুসারে পশ্চাদ সংযোগ শিল্প প্রতিষ্ঠান অর্থ এমন শিল্প প্রতিষ্ঠান যা অভ্যন্তরীণ ঋণপত্রের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে এমন কোন নিবন্ধিত ব্যক্তির নিকট পণ্য বা সেবা সরবরাহ করে যিনি কোন প্রকৃত রপ্তানিকারকের নিকট অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় তা সরবরাহ করেন।

সাধারণভাবে আমরা জানি যে, রপ্তানি মুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি শুল্ক-করমুক্ত। অনেকে বলেন যে, রপ্তানির উপর কোন ভ্যাট নেই। প্রকৃতপক্ষে এটা সঠিক নয়। প্রকৃত অর্থে রপ্তানির উপর ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। তবে, ভ্যাটের হার হল % (শূন্য) শতাংশ। আমরা জানি যে % (শূন্য শতাংশ) হল ভ্যাটের একটা হার। ভ্যাটের শূন্য হার এবং ভ্যাট অব্যহতির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। যদিও দুইক্ষেত্রেই প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ শূন্য।

রপ্তানির উপর শুল্ককরমুক্ত। এর অর্থ এই নয় যে, কেউ কোন রপ্তানি করলেই সেখানে কোন ধরনের শুল্ক কর প্রযোজ্য হবে না। বরং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে রপ্তানি কারকদের শুল্ককরমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। এই পদ্ধতি গুলোকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথমত, যেসব প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানিমুখী, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বন্ড লাইসেন্স দেয়া হয় এবং ওই সকল প্রতিষ্ঠান বন্ড লাইসেন্সের আওতায় উপকরণ শুল্ক-কর এবং ভ্যাট পরিশোধ ব্যতীত আমদানি বা ক্রয় করে থাকে।

দ্বিতীয়ত, শতভাগ রপ্তানি মুখী প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেশ কিছু এসআরও এর মাধ্যমে সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাটের অব্যাহতি দিয়েছে।

 

 

তৃতীয়ত, শুল্ক-কর এবং ভ্যাট পরিশোধ করা উপকরণ ব্যবহার করে ওই পণ্য রপ্তানি করা হলে, রপ্তানি করার পর প্রদত্ত শুল্ককর ফেরত পাওয়া যায়। ডেডো (ডিউটি এক্সামশন ড্র-ব্যাক অফিস) এর মাধ্যমে আমদানি শুল্ক এবং রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যর্পণ (ফেরত) পাওয়া যায়। ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক প্রত্যর্পণ যোগ্য, ভ্যাট দাখিলপত্রের মাধ্যমে রেয়াত নেয়া হয় এবং সম্পূরক শুল্ক হ্রাসকারী সমন্বয় করা হয়। এভাবে রপ্তানিকে শুল্ককর এবং ভ্যাট মুক্ত করা হয়েছে।

অর্থাৎ রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক-কর মুক্ত সুবিধা পেতে হলে প্রতিষ্ঠানকে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায় যে অনেকেই বিষয়টা বুঝতে পারেন না। তারা মনে করেন যে রপ্তানি হয়তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্ককর এবং ভ্যাটমুক্ত হয়ে থাকে। এমন ধারণা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই জটিলতার সম্মুখীন হয়। তাই শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্যের সাথে যারা জড়িত তাদের ভ্যাটের পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা অত্যন্ত আবশ্যক।


back top