কেন্দ্রীয় মূসক নিবন্ধন ভ্যাট আইনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। অত্যন্ত সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় মূসক নিবন্ধন বলতে বুঝায় যখন কোন আমদানিকারক, উৎপাদনকারী বা সেবা সরবরাহকারী একাধিক শাখা বা বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা সরবরাহ করে থাকেন। এ সম্পর্কে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৫ মোতাবেক যদি কোন ব্যক্তি এক বা একাধিক স্থান হতে অভিন্ন অথবা সমজাতীয় পণ্য বা সেবা বা উভয়ই সরবরাহ করেন এবং সকল হিসাব-নিকাশ ও রেকর্ড পত্রাদি সফটওয়্যার ভিত্তিক অটোমেটেড পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করেন তবে তিনি নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় মূসক নিবন্ধন গ্রহণ করতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, অভিন্ন বা সমজাতীয় পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা সত্ত্বেও কোন ইউনিটে হিসাব-নিকাশ এবং রেকর্ডপত্রাদি স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষণ করলে ঐ সকল ইউনিটকে পৃথকভাবে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে।
তামাক জাতীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন প্রযোজ্য হবে না। এছাড়াও যদি কোন ব্যক্তি দুই বা ততোধিক স্থান হতে ভিন্ন ভিন্ন পণ্য বা সেবা সরবরাহ করেন তাহলে তাকে প্রতিটি স্থানের জন্য পৃথক পৃথক নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই সফটওয়্যার ভিত্তিক অটোমেটেড পদ্ধতির হিসাব নিকাশ সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিষয় অনেক জিজ্ঞাসা রয়েছে। এ বিষয়টি ছাড়াও মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (কেন্দ্রীয় নিবন্ধন গ্রহণ ও কর পরিশোধ) বিধিমালা, ২০১৯ এ কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের বিস্তারিত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বিধিমালার বিধি ৩(৩) মোতাবেক কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত উৎপাদনকারী, সেবা সরবরাহকারী, বাণিজ্যিক আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীকে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সফটওয়্যার ভিত্তিক অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাব নিকাশ সংরক্ষণ করতে হবে। এবং বিধি ৪ মোতাবেক পূর্বের কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং তারিখের মধ্যে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সফটয়ার ভিত্তিক অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাব নিকাশ সংরক্ষণ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও সাধারন আদেশ নং- ১৬/মূসক/২০১৯, তারিখ: ৩০ জুন, ২০১৯ এর প্রথম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে সকল মুসক নিবন্ধিত বা নিবন্ধনযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ আর্থিক বছরে মোট টার্নওভার ৫ কোটি বা তার অধিক সে সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত মূসক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সকল দলিলাদি ও হিসাবপত্রাদি সংরক্ষণ করবে।
আইনের ধারা ২(৪২) মোতাবেক টার্নওভার বলতে কোন ব্যক্তি কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট সময়ে বা কর মেয়াদে করযোগ্য সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবা বাবদ প্রাপ্ত বা প্রাপ্য মোট অর্থের পরিমাণ। ধারা ২(৩২) মোতাবেক করযোগ্য সরবরাহ হচ্ছে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সরবরাহ ব্যতীত অন্য যেকোনো সরবরাহ। অব্যাহতি প্রাপ্ত সরবরাহ হচ্ছে আইনের প্রথম তফসিলে উল্লেখিত অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্য ও সেবা সমূহের তালিকা। অব্যাহতিপ্রাপ্ত কোন সরবরাহের মূল্য বা মূলধনী সম্পদের বিক্রয় মূল্য বা প্রতিষ্ঠানের অংশ বিশেষের বিক্রয় মূল্য এসব টার্নওভারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। সাধারণ অর্থে করযোগ্য সরবরাহের মূল্যই হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার।
তাই উপরের আলোচনা থেকে আমাদের অনেকের মাঝেই কখন ভ্যাট সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে এ নিয়ে যে সংশয় রয়েছে তার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। সহজভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানসমূহের আবশ্যিকভাবে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ভ্যাট সফটওয়্যার ব্যবহার করে হিসাবপত্রাদি সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়াও যে সকল প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার অধিক তাদেরকেও হিসাবপত্রাদি সংরক্ষণের জন্য বোর্ড অনুমোদিত ভ্যাট সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রেও যদি বার্ষিক টার্নওভার ৫ (পাঁচ) কোটি টাকার অধিক হয় সে ক্ষেত্রে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকেও ভ্যাট সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।